In the magical mountains of Zuluk and Silk Road
জুলুক আর রেশমপথের যাদুপর্বতে
  Abanti       Silk Route

জিনিসপত্র একটু ঠিকঠাক করে রাখতে রাখতে খেয়াল হলো - আরে আমার দস্তানা কোথায় গেলো! লাগবে বলে হাতের ব্যাগ টাতেই তো রেখেছিলাম। একটা আছে, আর একটা? শুধু ঠান্ডার ভয়ে নয়; কিছু হারাই না, এই সুনাম টা নিজের কাছে অক্ষত রাখার জন্য ওটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আকাশ ঘন কালো হয়ে এসেছে, কনকনে ঠাণ্ডা অগ্রাহ্য করে ফের চড়াই ভাঙা। নির্ঘাত গাড়িতেই আছে। দম ফুরিয়েছে। একটু দাঁড়াতেই বুঝলাম দমকা হাওয়ার সাথে আরো কি যেন একটা। রাশি রাশি পাতলা পেঁজা তুলো নেমে আসছে মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে। বরফ? বরফ!!! বরফ!!! আমার জীবনে দেখা প্রথম তুষারপাত। সামনে বিশাল বিশাল পাহাড়ের প্রাচীর, একপাশে অন্তহীন পতন পথের খাদ, আলোর বড় জোর কণা মাত্রই অবশিষ্ট আছে। হাজার হাজার বছরের পুরনো রেশম পথের ওপর, আধা ঘুমন্ত জুলুকের মাথায় দাঁড়িয়ে, উচ্চতার সেরা উপহারে ভিজছি একান্তে। গালের ওপর, চোখের পাতায়, কপালে রেশম সুতোর নকশা বুনতে দাঁড়ালো তারা, গলে গেলো, ভিজিয়ে গেলো অন্তর। এক ই দিনে দুবার জাগা - দিন শুরুতে, সন্ধ্যে শুরুতেও। পাহাড় আত্ম আবিষ্কারের প্রিজম।



খুব ভোরে দরজায় টোকা, ঘুম ভাঙলো। খুব পরিষ্কার না হলেও বেশ দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা র আংশিক অবয়ব (আপার জুলুক থেকে দেখা যায়) । চারিদিক বরফের পাতলা আস্তরণে ঘেরা, চকচকে নীল আকাশ থেকে ঝরে পড়া কচি পাতার মতো নরম রোদ। আর ওই যে তার সময়হীন অস্তিত্ব, সেখানে মেঘ মন্ত্রীরা জড়ো হচ্ছে। ৩৬০ ডিগ্রি জুড়ে যত পাহাড়, সবার মাথা ধপধপে সাদা। আমরা যে ছাদে দাঁড়িয়েছি, সেখানে বরফ। হোম স্টে র মাথায় বরফ। রোদ পেয়ে গলছে তারা। আর ফুট দশেক দূরত্বে ইয়াক। অস্তিত্বের কোষে কোষে আনন্দ ঝংকার ওঠে - পাহাড়, পাহাড়।



হাঁটতে এসেছি। রেশম পথে মর্নিং ওয়াক। এই দিকটা পাহাড় আড়াল। রোদ নাগাল পাচ্ছে না পথে গড়িয়ে পড়ার। একটা ফুলে ভরা গুরাস গাছ পেরিয়ে এলাম। দুপাশে বরফ। পাখিদের ডাক জায়গাটা ভাসিয়ে দিচ্ছে। এই বুঝি সামনে চলে আসবে স্বপ্নের ক্যারাভান। এই বুঝি দেখা হবে এক চিনা সওদাগরের সঙ্গে। সামনের বিশাল পাহাড় টার চোখে চোখ রাখি। প্রেম যদি উচ্ছাস হয়, ভালোবাসা হয়তো তাহলে গভীর, শান্ত। সময়ের ভাঙা গড়ায় তার কাজ নেই। পাহাড় ভালোবাসতে জানে। ঘড়ির কাঁটার সাধ্য কি যে সে পাহাড় সময়ের গভীরতায় একটা আঁচড় কাটে!



কাটাও কে সিকিমে বরফ সাম্রাজ্য বলা হয়। কিন্তু সারারাত তুষারের ধারাপাতের পর এখানেও আর একটু উচ্চতায় বরফ সাম্রাজ্য শুরু হয়েছে। ড্রাইভার ভাই বলল আর্মি আজ কতটা উঠতে দেবে কে জানে। এই পথে আগেও এসেছি। কিন্তু বরফ পড়া জিগজাগ রোড কি অবিশ্বাস্য সুরীয়্যাল লাগছিলো থাম্বি থেকে। আকাশ ওই শেষ নীল। আরও ওপরে উঠতে থাকি। রাস্তার দু পাশে থাক থাক বরফ। বরফের সফেন চাদরে ঢাকা পড়েছে চারদিক, সত্যিকার ক্রিসমাস ট্রি গুলোর মাথাও। ক্যালেন্ডারে নয় তো কি হয়েছে, আজ কিন্তু বড়দিন। আকাশ আরো মেঘে ঢাকছে। আরও তুষারপাতের সম্ভাবনার ধূসর পাণ্ডুলিপি আকাশ জুড়ে। সেনাবাহিনীর আদেশে টুকলা ভ্যালির ৬ কিলোমিটার আগেই অভিযান শেষ। সবাই তুষার খেলায় ব্যস্ত। যতদূর চোখ যায়, সাদা রঙে কি রকম আচ্ছন্ন লাগে। অপার্থিব এই দৃশ্য, এই অনুভূতির তুলনা খালি এই দৃশ্য, এই অনুভূতি রাই।



ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসা শরীর, কিন্তু মন অবিশ্বাস্য রকমের সচল রইলো। পাহাড়িয়া শেষ শীতের ঐশ্বর্য গুলো এক এক করে কুড়িয়ে নিয়ে নামছি। প্রাচীন বৃক্ষরাজী পেরিয়ে চলেছি, "অমর পাতার ছাপ যেখানে পাথরের চিবুকে লীন"। জন অরণ্য থেকে বহু যোজন দূরে আবার দিন ফুরাবে। আবার "আদিম রাত্রির ঘ্রাণ" বুকে নিয়ে পর্বত অন্ধকার জাগবে। হয়তো বা চেতনার দিক নির্ণয় করতে আবার ফিরবো, হয়তো বা নিছক অকারণে। আবহমানতার উচ্চতর রেশম পথ থেকে নামছি আর এক পাহাড় ঘেরা গন্তব্য পদমচেনের উদ্দেশ্যে। সে গল্প পরে। ও হ্যাঁ, দস্তানা টা পেয়েছিলাম, আর হারানোর শক্তি নেই যে।



 
Please Share This
               
 
   Previous
অল্প চেনার গল্প: উত্তরবঙ্গ পর্ব - ৫ লামাহাটা
 
|   Silk Route & Other Packages
|   Upcoming Group Tours
 
Copyright © Miles & Smiles Travel Holidays 2024. All right reserved.